সংবাদ

 ১১০ বছরের রেকর্ড ভেঙ্গে ইতিহাসে বাংলাদেশের আবুল হাসান

১৯৩ সংগ্রহ করতেই ৮ উইকেটের সাজঘরে ফেরা হয়ে গেছে । ২০০ রান পেরোতে পারবে কিনা এই যখন সবার মনে সংশয়, ঠিক সেই মুহূর্তে মাঠে নামলেন নবাগত আবুল হাসান । তারপর যা হয়েছে তা শুধুই বিষ্ময়ের ব্যাপার । প্রথম দিনের খেলায় প্রথম ইনিংসে যারা আরেকটি বিপর্যয়ের কথা ভাবছিলেন তাদের সেই আশংকা কাটিয়ে বাংলাদেশের সংগ্রহ ৩৬৫, হাতে কিন্তু সেই দুই উইকেট এখনো আছে । ১৯৩ থেকে ৩৬৫ এই ১৭২ রানের পার্টনারশিপে ১০০ রানই যে এসেছে নয় নম্বরে ব্যাটিং এ নামা বোলার আবুল হাসানের ব্যাট থেকে । তিনি যেন বাংলাদেশের টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানদের ব্যাটিং শিখিয়ে দিলেন । তার এই সেঞ্চুরি টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে গত ১১০ বছরের মধ্যে এই প্রথম । ১১০ বছর আগে অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটার রেগি ডাফ এমন এক কীর্তি করেছিলেন । 

খুলনা আবু নাসের স্টেডিয়ামের অভিষেক দিনে অভিষেক টেস্টে আবুল হাসান এই রেকর্ড করলেন । আবুল হাসান ১০৮ বলে ১০০ রান করে, ছেড়ে দেয়ার বল ছেড়ে দিয়ে, মারার বলে বাউন্ডারি মেরে টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানদের যেন লজ্জা দিচ্ছিলেন । এক প্রান্তে আবুল হাসানের এমন ব্যাটিং নৈপূন্যে আরেক ব্যাটসম্যান মাহমুদুল্লাহ তাকে সাহস জোগিয়ে যাচ্ছিলেন । মাহদুল্লাহ ৭২ রানে অপরাজিত আছেন । এখন আমরা দলীয় স্কোরকে ৪০০ রানের দিকে নিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখতে পারি । খুলনার আবু নাসের স্টেডিয়ামের টেস্ট অভিষেকটা প্রথম দিন শেষেই স্মরণীয় । এর জন্য আবুল হাসানকে অভিনন্দন না জানালেই নয় ।

 

অরণ্যে রোদন

এই যন্ত্র লইয়া আমরা কী করিব

 আনিসুল হক | তারিখ: ০৯-১০-২০১২

 দ্য গডস মাস্ট বি ক্রেজি নামের একটি চলচ্চিত্রে একটা ঘটনা ঘটেছিল। কালাহারি মরুভূমিতে একটা কোকা-কোলার বোতল এসে পড়েছিল উড়োজাহাজ থেকে। ওই এলাকার লোকেরা, যাদের বলা হয়েছে বুশম্যান, জংলি, তারা এর আগে শান্তিতেই ছিল। তারা এর আগে কোনো দিন কোনো কোকা-কোলার বোতল দেখেনি, যন্ত্রজাত কোনো কিছুই দেখেনি। আকাশ থেকে পড়া কোকের বোতলটিকে তারা দেবতার পাঠানো কোনো সামগ্রী বলে ভুল করে। ওই কোকের বোতলটা কে নেবে, ওটা দিয়ে কী করা হবে, এই নিয়ে শুরু হয় নানা ঘটনা-অঘটনা। বাংলাদেশে আমরা আসলে জংলি কিংবা অসভ্য মানুষদের মতোই আচার-আচরণ করে থাকি। আমরা যথেষ্ট পরিপক্ব হইনি, আমাদের শিক্ষা নেই, সভ্যতা কিংবা গণতন্ত্র সম্পর্কে ধারণা নেই, এ-সংক্রান্ত কোনো মূল্যবোধকেই আমরা ধারণ করি না, আমাদের সমাজ না সামন্ততান্ত্রিক, না পুঁজিবাদী, না গ্রামীণ, না যান্ত্রিক; আমাদের শিক্ষা আমাদের আলোকিত করে না, আমাদের অসৎ করে, লোভী করে, ভোগী করে, সুবিধাবাদী করে, অত্যাচারী করে। আমাদের গণতন্ত্র পরমতসহিষ্ণুতা শেখায় না, আমাদের ধরাকে সরা জ্ঞান করার ক্ষমতা দেয়, আমরা সবকিছুই নিজের তালুক মনে করে যা খুশি তা-ই করি। নিয়মকানুন, আইনশৃঙ্খলা বলতে জগতে কোনো কিছু আছে বলে আমাদের ধারণাই থাকে না। এই রকম একটা বুশম্যান বা জঙ্গলমানুষদের এলাকায় আকাশের উড়োজাহাজ থেকে কোমল পানীয়র বোতলের মতো করে হঠাৎ এসে যায় মোবাইল ফোন, এসে যায় ইন্টারনেট, ফেসবুক। মোবাইল ফোনে আবার ক্যামেরা আছে, সেটা দিয়ে ছবি তোলা যায়, ভিডিও করা যায়। আমরা, এই জঙ্গলমানুষেরা আকাশ থেকে পড়া এই সব আজগুবি যন্ত্র পেয়ে হতবুদ্ধি হয়ে গেছি, এই যন্ত্র লইয়া আমরা কী করিব?
আমরা মোবাইল ফোন আর ইন্টারনেটের প্রযুক্তি লাভ করলাম। সেই দেশে, যে দেশে রাস্তায় কোনো একটা গাড়ি কোনো পথচারীকে কারণে-অকারণে ধাক্কা দিলে তার পরিণতি হয় হাজার হাজার মানুষের রাস্তায় নেমে আসা, আর নির্বিচারে গাড়ি ভাঙচুর করা। যদি কোনো কারণে কোনো শিক্ষার্থী সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হন, তা হলে আশপাশের সব স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দলে দলে শিক্ষার্থীরা নেমে আসবে পথে, ভাঙো গাড়ি। একই ঘটনা ঘটবে যদি কোনো গার্মেন্টস শ্রমিক ঘটনার শিকার হন। একবার, এক পুলিশ সদস্য সড়ক দুর্ঘটনায় পতিত হলে রাজারবাগ পুলিশ লাইন থেকে পুলিশের জোয়ানরা পর্যন্ত বেরিয়ে এসে রাস্তায় ভাঙচুর করেছিলেন, বেশ কয়েক বছর আগে। কয়েকজন শিক্ষার্থী রাতের বেলা আড্ডা দিতে গিয়েছিল আমিনবাজারের ওপাশে, ডাকাত সন্দেহে তাদের পিটিয়ে মারা হয়েছে মাত্র সেদিন। টেলিভিশনের খবরে প্রায়ই দেখি, বিশ্ববিদ্যালয়ের দুদল ছাত্র ইয়া বড় বড় চাপাতি, রামদা, তরবারি, লাঠিসোঁটা এমনকি পিস্তল উঁচিয়ে পরস্পরকে ধাওয়া করছে। আপনারা কি কেউ ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক কিংবা অ্যানিমেল প্লানেট চ্যানেলে সিংহ বা বাঘের হরিণ শিকারের দৃশ্য দেখেছেন? হরিণের পালের মধ্যে সিংহ চড়াও হয়, একটা-দুটো হরিণকে বাগে পেয়ে যায়। এমনকি দল বেঁধে সিংহ হামলে পড়ে একটা মোষের ওপরেও। ওই যুযুধান ছাত্রের দল বিরোধী পক্ষকে তাড়া করতে থাকলে হঠাৎ করে একজন-দুজনকে পেয়ে যায় বাগে, তখন তার ওপরে লাঠি, চাপাতি ইত্যাদি নিয়ে যেভাবে তারা চড়াও হয়, আর সেটা টেলিভিশনের পর্দায় যেভাবে দেখানো হয়, তার কোনো ব্যাখ্যা হয় না, বুশম্যান বা আদিমেরা এর চেয়ে সভ্য, এমনকি জানোয়াররাও আমাদের চেয়ে ঢের বেশি মানবিক। পশুকুল কখনো স্বজাতির ওপরে হামলা করে না, সিংহ হরিণ খায়, কিন্তু কম ক্ষেত্রেই সিংহে সিংহে মারামারি হয়।
এই রকম একটা অপ্রস্তুত সমাজে যখন মোবাইল ফোন এল, ইন্টারনেট এল, তখন ওটা দিয়ে আমরা কী করব? আমরা মেয়েদের ছবি তুলতে শুরু করলাম, আর সেটা ছড়িয়ে দিতে লাগলাম ইন্টারনেটে। অন্যের বাথরুমে পর্যন্ত গোপন ক্যামেরা লাগিয়ে রাখলাম, আর ছবি তুলে তুলে সেটা পোস্ট করতে লাগলাম অন্তর্জালে। নিজেরা নিজেদের ছবি তুলে রাখলাম মোবাইল ফোনে, সেটা হাতছাড়া হয়ে ঘটে গেল মহা সর্বনাশ। আমরা নিরীহ মেয়েদের হয়রানি করে সেই ছবি তুলে রেখে ব্ল্যাকমেইল করতে লাগলাম। মেয়েরা আত্মহত্যা করতে লাগল। কোনো মেয়েকে হয়রানি করতে হবে, তার নামে একটা ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খুলে আজেবাজে কথা লিখে রাখতে লাগলাম।
আমাদের প্রতিবেশী দেশে সমস্যা হলো আরও প্রকট। সেখানে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ছড়ানো ও সাম্প্রদায়িক হানাহানি উসকে দেওয়ার জন্য মোবাইল ফোন ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়েছে। তাদের প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত এই বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং এটা প্রতিরোধের চেষ্টায় কর্তৃপক্ষ গলদঘর্ম হয়ে উঠেছে।
বাংলাদেশে আমরা ঘটালাম এক ভয়াবহ, ন্যক্কারজনক, লজ্জাজনক, ঘৃণ্য ঘটনা। ফেসবুকে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করার মতো ছবি একটা পাওয়া গেছে। কার অ্যাকাউন্টে? সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অমুকের অ্যাকাউন্টে। ফেসবুক যাঁরা ব্যবহার করেন, তাঁরা জানেন, ফেসবুকের ছবি যেকোনো কারও হোমে আসতে পারে, সেটার সঙ্গে ওই ফেসবুক অ্যাকাউন্ট হোল্ডারের কোনো সম্পর্ক লাগে না। তারপর আবার যে কেউ যেকোনো ছবি বা লেখা বা মন্তব্য যেকোনো কারও পাতায় সেঁটে দিতে পারে। এটা অনেকটা এই রকম, আপনি আপনার বাড়িতে নেই, সাত দিন বিদেশে ছিলেন, এসে দেখলেন, আপনার দেয়ালে কেউ একটা মানহানিকর পোস্টার সেঁটে দিয়েছে। আপনি দেখামাত্র সেটা সরিয়ে ফেললেন। ওই পোস্টারের জন্য আপনি দায়ী নন। এটা করেছে কোনো এক গুপ্ত অপরাধী, যে কিনা আপনাকে বিপদে ফেলতে চায়। উন্মাদ, মানসিক রোগী শুধু এই দেশে নেই, সারা পৃথিবীতে আছে। প্রতিটা মানুষের বিশ্বাসই যে শ্রদ্ধার বিষয়, এটা অনেকেই মানে না। তারা চরম আপত্তিকর জিনিসপত্র বানায়, এর নামে ওর বিরুদ্ধে। ইন্টারনেটে নেই, এমন কিছুই নেই। যে কেউ চাইলে ফেসবুকে ইন্টারনেটে যেকোনো কিছু করতে পারেন। আপনি চাইলেই বিশ্বব্যাংক সভাপতির নামে অ্যাকাউন্ট খুলে তাতে ছবি দিতে পারেন যে তিনি পদ্মা সেতুতে টাকা না দেওয়ার জন্য আবুল হোসেনের কাছে মাফ চাইছেন। কিন্তু ওটা বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জানবেনও না, বুঝবেনও না। মরহুম লেখক হুমায়ূন আহমেদ ফেসবুক ব্যবহার করতেন না, কিন্তু তাঁর নামে অ্যাকাউন্ট ছিল একাধিক, এখনো আছে। ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানের নামে অন্তত সাত-আটটা অ্যাকাউন্ট আছে, যার একটাও সাকিবের নয়।
রামুর ঘটনায় আলোচিত ওই তরুণের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট কে দেখেছে? ডেইলি স্টার-এর উপসম্পাদক ইনাম আহমেদ গিয়েছিলেন ঘটনাস্থলে, সেখান থেকে পাঠিয়েছেন মর্মস্পর্শী সব প্রতিবেদন। আমাকে তিনি জানিয়েছেন, তিনি অন্তত ২০০ জনকে জিজ্ঞেস করেছেন, তাদের কেউই ফেসবুক খুলে ওই ছবি দেখেনি, যার প্রতিবাদে এত কাণ্ড। তা হলে এত ক্ষোভ, এত আগুন কেন। কারণ, একটা খুবই আপত্তিকর, অনুভূতিতে আঘাত লাগতে পারে, এমন ছবি ইন্টারনেট থেকে নেওয়া হয়েছিল মোবাইল ফোনে। তারপর সেই ছবি ব্লুটুথে গেছে এক মোবাইল ফোন থেকে আরেক মোবাইল ফোনে। সেটা কেউ কেউ দেখেছে, আবার অনেকেই দেখেনি। যারা দেখেছে, তারা ক্ষুব্ধ হয়েছে। জানানো হয়েছে, এটা করেছে অমুক বড়ুয়া। আর যায় কোথায়?
কিন্তু তার পরেও সন্দেহ থেকে যায়। এই ধরনের বিক্ষোভ রাতের বেলায় হয় না। এই ধরনের বিক্ষোভে গাড়ি করে লোক আনা হয় না। সরকার তো ঘটনা ঘটার সঙ্গে সঙ্গেই বলছে, এটা পূর্বপরিকল্পিত। পূর্বপরিকল্পিতই যদি হবে, তা হলে সরকার করলটা কী? গোয়েন্দারা করলটা কী? ওই এলাকা তো বিশেষ এলাকা। রোহিঙ্গা ইত্যাদি কারণে সেখানে আমাদের বিভিন্ন বাহিনী ও এজেন্সির সদা সক্রিয় থাকার কথা! তদন্ত সম্পন্ন হওয়ার আগেই ‘এ’ দল বলছে, এটা ‘বি’ দল করেছে, ‘বি’ দল বলছে, এটা ‘এ’ দলের কাণ্ড। দায়িত্বশীল মহল থেকে বলা হয়েছে, এটা বিদেশি চক্রান্ত। বিদেশিরা এই দেশে বসে চক্রান্ত করে, আর আমরা ঘোড়ার ঘাস কাটি?
অনুমান করতে পারি, এটা ‘এ’ দল করতে পারে, ‘বি’ দল করতে পারে, ‘জে’ দলও করতে পারে, দেশিরা করতে পারে, বিদেশিরা করতে পারে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার যারা চায় না, তারা করতে পারে, রোহিঙ্গারা করতে পারে। কিন্তু ঘটনা হলো, শত শত মানুষ এই অপকর্মে যোগ দিয়েছে। সেখানে এ দল ও দল মিলেমিশে গেছে। এমনকি পুলিশের থানাকর্তাও বক্তৃতা দিয়েছেন। আমাদের সমাজটাই এত অসহিষ্ণু, এত হুজুগে, যেন আমরা একটা বারুদের ঘরে বসবাস করছি। সামান্য ইন্ধনেই এখানে বড় বিস্ফোরণ ঘটানো যায়, ঘটে।
কাকে দোষ দেব। এ আমার পাপ, এ তোমার পাপ। একাত্তর সালেও কি বৌদ্ধদের এতগুলো উপাসনালয় আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছিল? যে ঘুমন্ত শিশুটির ঘুম ভেঙে গেছে শত শত মানুষের চিৎকারে, উদ্বিগ্ন মা যাকে কোলে করে আঁচলের তলে পুরে নিয়ে ছুটেছেন জঙ্গলের দিকে, সেই জঙ্গলে যাদের কেটেছে ভয়ার্ত প্রহর, যে দূর থেকে শুনেছে চিৎকার আর দেখেছে আকাশ লাল করে লেলিহান শিখা দাউ দাউ করে জ্বলছে, দিনের বেলা ফিরে এসে দেখেছে পুড়ে গেছে তার সব, তার খেলনা পুতুলটা, বইপত্র, তাদের আর কিছু নেই, তার মা তাকে নিরাপত্তার আশ্বাস দিতে পারেননি, তার বাবা পারেননি, তার মহল্লার গুরুজন দিতে পারেননি, তার ভান্তে পারেননি, ওই শিশুকে আমরা কী সান্ত্বনা দেব?
ইন্টারনেটেই এখন আগুনে পোড়া বৌদ্ধমন্দির আর বৌদ্ধ বসতিগুলোর ছবি দেখতে পাবেন। যদি দেখেন, কান্নায় আপনার চোখ ফেটে আসবে, দুঃখে আপনার বুক ভেঙে আসবে। এই লজ্জা আমরা রাখব কোথায়? এই মুখ আমরা কাকেই বা দেখাব?
আমাদের আশঙ্কা, অন্য অনেক তদন্তের মতো এই তদন্তের কোনো ফল আসবে না। কারণ, তদন্ত হওয়ার আগেই দায়িত্বশীল মুখ থেকে ‘কে দায়ী, কারা দায়ী’ তা বলে ফেলা হয়েছে। আর প্রথম আলোয় মশিউল আলম যেমনটা লিখেছেন, এখানে সব কটি রাজনৈতিক দলই একাকার হয়ে ভূমিকা পালন করেছে। তার ওপর যুক্ত হয়েছে অসহায় বৌদ্ধ পরিবারের ভিটেমাটিটুকুনের ওপরে লোলুপ শ্যেন দৃষ্টি, ‘ওটা দিতে হবে।’ মশিউল আলমের আশঙ্কা, এ ধরনের অপকর্ম আবারও ঘটতে পারে।
আশার কোনো আলোই তো আর দেখতে পাচ্ছি না। যেখানে আমাদের আশা, সেই তরুণেরা কোথায়? এই অঞ্চলে সাম্প্রদায়িক হানাহানির ইতিহাস পুরোনো, খুবই করুণ, খুবই ভয়াবহ, খুবই লজ্জাজনক, কিন্তু সেই সঙ্গে আছে শুভবাদী মানুষের প্রতিরোধের চেষ্টা, আছে শান্তির সপক্ষের মানুষদের সমাবেশ। আশির দশকেও আমরা দেখেছি, বন্যায় কিংবা সাম্প্রদায়িক সমপ্রীতি বিনষ্টের অপচেষ্টার বিরুদ্ধে তারুণ্যের মহা-উদ্যোগ। আজ সেই শুভবাদী তরুণেরা কোথায়?
মোবাইল, ইন্টারনেট, ফেসবুক একটা যন্ত্র মাত্র, মাধ্যম মাত্র। এটাকে কেউ কেউ খারাপ কাজের জন্য ব্যবহার করছে। আমাদের তরুণেরা কি পারে না এটাকে ভালো কাজের জন্য ব্যবহার করে দেখিয়ে দিতে? সামাজিক নেটওয়ার্ক তারুণ্যের হাতে ব্যবহূত হোক শুভবাদের পক্ষে জনমত সংগঠনের কাজে, শুভবাদী মানুষের প্রতিরোধের শক্তিকে জোরালো করার উপায় হিসেবে, এটা কি খুব বেশি চাওয়া হবে?
আনিসুল হক: সাহিত্যিক ও সাংবাদিক। 
[দৈনিক প্রথম আলো, তারিখ: ০৯-১০-২০১২]

 

 

অরণ্যে রোদন

আগুনের পরশমণি

আনিসুল হক | তারিখ: ২৫-০৯-২০১২

 অজপাড়াগাঁ বলতে যা বোঝায়, চিরিরবন্দর হলো তা-ই। একটা উপজেলা বটে, তবে দিনাজপুরের এই উপজেলা বন্দরটিকে সর্ব অর্থে পিছিয়ে পড়া এলাকাই বলতে হবে। রংপুর থেকে গাড়িতে ঘণ্টা খানেক। রাস্তা ভালো, দুই ধারে ধানখেত, বিস্তীর্ণ প্রান্তর, ওই দূরে দেখা যায় মানুষের বসতি। সেই চিরিরবন্দরে ধানখেতের মধ্যে উঠছে একটা পাঁচ-ছয়তলা ভবন। অনেকটা ঢাকার ছয়তলা ফ্ল্যাটবাড়ির মতো দেখতে। তাতে সাইনবোর্ড: আবাসিক বিদ্যালয়। তিন দিকে ধানখেত, এখানে আবাসিক স্কুল কেন? কারণ, ভালো কাজের প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে এই এলাকায়।
শুরুটা করেছেন অর্থোপেডিক চিকিৎসক অধ্যাপক এম আমজাদ হোসেন। তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তাঁর বিভাগের প্রধান ছিলেন। একবার আমি যে মিনি+বেবি অ্যাক্সিডেন্ট করেছিলাম, মানে সামনে একটা মিনিবাস দাঁড়িয়ে ছিল, তার পেছনে আমার বেবিট্যাক্সি গিয়ে দাঁড়াল, আর একটা মিনিবাস এসে আমাদের বেবিট্যাক্সিটাকে ধাক্কা দিয়ে স্যান্ডউইচ বানিয়ে দিল, আমার ঠ্যাং নিয়ে আমি আর দাঁড়াতে পারি না, বেবিট্যাক্সিটা একেবারে কাগজের ঠোঙার মতো হয়ে গেল দুমড়েমুচড়ে, ওই সময় আমার পায়ে প্লাস্টার করে দিয়েছিলেন সদাশয় ডা. আমজাদ হোসেন। আমার পদমর্যাদা রক্ষার জন্য ডাক্তার সাহেবের প্রতি আমি চিরকৃতজ্ঞ। তাঁর সঙ্গে আমার মাঝেমধ্যে দেখা হয়, সেটাও এমন জায়গায়, যেখানে আপনি ‘না’ বলতে পারবেন না। ঢাকার একটা জিমনেসিয়ামে, ড্রেসিংরুমে, আমি হয়তো সাঁতার কেটে ফিরে কাপড় পাল্টাচ্ছি, তিনিও ব্যায়াম সেরে এসে পোশাক পাল্টাচ্ছেন। নিজের শরীরে যখন মাত্র একটা তোয়ালে, তখন যেকোনো প্রস্তাবে রাজি হয়ে যাওয়াটাই সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ। ডা. আমজাদ বললেন, ‘চিরিরবন্দর গ্রামে আমরা একটা স্কুল করেছি। আনিস ভাই, বলেন, কবে যাবেন?’
‘যাব যাব’ বলে আমি প্যান্টে পা গলাই।
উপলক্ষও এসে গেল। ন্যাশনাল ডিবেট ফোরাম ওই চিরিরবন্দরে রংপুর বিভাগীয় বিতর্ক উৎসব করছে।
রংপুর যাওয়া হবে, আম্মার সঙ্গে দেখা করা যাবে, একই সঙ্গে দেখা হবে চিরিরবন্দরে আমজাদ সাহেবের স্কুল এবং রংপুর বিভাগের ছেলেমেয়েদের বিতর্ক উৎসব। তা হলে পথিকপরান চল, চল সে পথে তুই...
চিরিরবন্দর যাচ্ছি, এ কথা শুনেই সবাই বলতে লাগলেন, কই যাও, আমেনা-বাকী স্কুল? ও তো খুবই নাম করছে। দিনাজপুরে তাদের রেজাল্ট খুব ভালো। গ্রামের ওই স্কুলটি বোর্ডে তৃতীয় হয়! কী বলে! এত জিলা স্কুল আছে, ক্যাডেট কলেজ, ক্যান্ট পাবলিক স্কুল, সবার মধ্যে ওই অজপাড়াগাঁর স্কুলটা হয় তৃতীয়।
সত্যি বলছি, চিরিরবন্দরে না গেলে আমার অনেক কিছুই অজানা থেকে যেত। মুক্তিযোদ্ধা ডা. আমজাদ হোসেন মা-বাবার নামে ফাউন্ডেশন করেছেন, সেই ফাউন্ডেশন নানা সামাজিক উন্নয়নমূলক কাজ করছে, তার মধ্যে খুবই উল্লেখযোগ্য হলো আমেনা-বাকী রেসিডেনসিয়াল স্কুল।
থানা সদরে রাস্তার ওপরে তার ক্যাম্পাস। ভেতরে নানা ধরনের গাছপালা। স্কুলঘর। টিনে ছাওয়া টানা ভবন আছে, বহুতল ভবনও আছে। সাড়ে তিন শর মতো ছাত্রছাত্রী হোস্টেলে থাকে। আর এগারো শর মতো ছাত্রছাত্রী পড়াশোনা করে। হোস্টেলের ডাইনিং রুমে গিয়ে দেখি, ক্লাস থ্রি-ফোরে পড়া বাচ্চামেয়েরা টেবিলে বসে ভাত খাচ্ছে। গ্রাম থেকে আসা বাচ্চা একেকটা, ওদের খাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকি। শিশুর মুখের চেয়ে সুন্দর দৃশ্য আর কী হতে পারে। আবেগে চোখ ছলছল করে ওঠে।
স্কুল প্রতিষ্ঠা করা কঠিন কাজ। ইট-কাঠ দিয়ে হয়তো ভবন বানানো যায়, কঠিনতর হলো প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করা। ২০০০ সালে প্রতিষ্ঠিত এ স্কুলটি পরিচালিত হচ্ছে সুনামের সঙ্গে, বাচ্চারা বৃত্তি পরীক্ষায় ভালো করে, সমাপনী পরীক্ষায় ভালো করে, মাধ্যমিক পরীক্ষায় সবাই পাস করে, আর বেশির ভাগই জিপিএ-৫ পায়। শুধু লেখাপড়ায় তারা ভালো, তা-ই নয়, তারা খেলাধুলা করে, গ্রামে যায়, পরিবেশ আর মানুষের সঙ্গে পরিচিত হয়। কম্পিউটার ল্যাবরেটরি আছে, দিন-দুনিয়ার খবর রাখে।
টাকাপয়সা হলে অনেকেই অনেক কিছু করেন। কেউ হয়তো দেশ-বিদেশে যান, বিদেশে টাকা পাচার করেন, সুইস ব্যাংকে রাখেন, অস্ট্রেলিয়া-কানাডা প্রবাসী হন, মালয়েশিয়ায় বাড়ি করে দ্বিতীয় নাগরিকত্ব গ্রহণ করেন। কিন্তু অনেকেই আছেন এই দেশে, টাকাপয়সা দিয়ে ভালো কাজ করেন, ভালো উদ্যোগ গ্রহণ করেন। একজন চিকিৎসকের টাকা তো সোনালী ব্যাংক থেকে মেরে দেওয়া কোটি কোটি টাকা নয়, একজন একজন করে রোগীকে সেবা দিয়ে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে অর্জিত টাকা। সেই টাকা দিয়ে নিজের গ্রামে একজন স্কুল বানিয়েছেন, গ্রামের ছেলেমেয়েদের জন্য বোর্ডিং স্কুল, আর সেটা চলছে সাফল্যের সঙ্গে। আমি বাচ্চাগুলোর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকি। একেকটা বাচ্চা একেকটা সম্ভাবনার নাম। এই শিশুদের অনেকেই এসেছে সমাজের একেবারে পিছিয়ে পড়া অংশ থেকে, এখানে পড়ছে বিনা খরচে।
সবচেয়ে যেটা বড় কথা, এখন আরও আরও স্কুল হচ্ছে চিরিরবন্দরে, দিনাজপুরে। একজন বললেন, দিনাজপুরে একটা কলেজ হচ্ছে, যেটা সম্পূর্ণ শীতাতপনিয়ন্ত্রিত হবে। বাংলাদেশে একটা কিছু হলে সবাই সেটা অনুসরণ করতে ঝাঁপিয়ে পড়ে। সিনেমা হল বানানো শুরু হলো তো সিনেমা হল, চায়নিজ রেস্টুরেন্ট তো চায়নিজ রেস্টুরেন্ট। এখন যদি ভালো স্কুল বানানো, ভালো স্কুল চালানোর প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যায় বেসরকারি উদ্যোগে, সেটা একটা দারুণ সুসংবাদই বটে।
আর ওই বিতর্ক উৎসবটাতেও দিনাজপুর-রংপুরের নানা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে ছেলেমেয়েরা এসেছে। এই সবই তো প্রশিক্ষণ। একটা জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যাওয়া, অনেকের সঙ্গে মেশা, কথা বলা, মঞ্চে দাঁড়িয়ে দুটো কথা বলা, সবই তো শিক্ষারই অংশ। কবির ভাষায়: ‘আকাশ আমায় শিক্ষা দিল উদার হতে ভাই রে, কর্মী হবার মন্ত্র আমি বায়ুর কাছে পাই রে।’
বাংলাদেশের আরও অনেক জায়গায় এই ধরনের স্কুল আছে। আমরা কুমিল্লা কিংবা সিরাজগঞ্জের বেসরকারি স্কুলের ভালো ফল করার কথা যেমন জানি। এই যে ছেলেমেয়েরা স্কুলে যাচ্ছে, শিক্ষার পরশমণির ছোঁয়া পাচ্ছে, এদের জীবন তো বদলে যাবে। রংপুরের পায়রাবন্দের ছোট্ট বালিকাটি রাতের অন্ধকারে একটা প্রদীপ জ্বালিয়ে সেই যে নিষিদ্ধ বিষয় ইংরেজি আর বাংলার পাঠ নিয়েছিল, সে তো কেবল নিজের জীবনটাকে বদলায়নি, সমাজটাকেই বদলে দিয়েছে, সেদিন বেগম রোকেয়া লেখাপড়া করেছিলেন বলেই আজ এই দেশে নারীরা সর্বক্ষেত্রে এগিয়ে আসছে, লড়াই করছে।
বাংলাদেশের ৯০ ভাগের বেশি ছেলেমেয়ে স্কুলে যায়। ২০ বছর পরে এই দেশের প্রায় সবাই যদি শিক্ষিত হয়, তা হলে আমাদের কৃষকেরা হবেন শিক্ষিত কৃষক, আমাদের শ্রমিকেরা হবেন শিক্ষিত শ্রমিক। সেই সময়টা, দেশটা কি উন্নততর হবে না?
দেশের রাজনীতি আমাদের পিছু টানছে। আমাদের দেশে চলছে বেপরোয়া লুণ্ঠনতন্ত্র। ক্ষমতাবানেরা আইনকানুন, ন্যায়নীতি, মূল্যবোধ ইত্যাদির পরোয়া করেন না। কিন্তু পাশাপাশি মানুষ এগিয়ে চলেছে। ব্যক্তি মানুষ কী কী সব কাণ্ড ঘটাচ্ছে কৃষি ক্ষেত্রে, শিল্প ক্ষেত্রে, ব্যবসায়িক উদ্যোগে। আরব দেশের খেজুরের চাষ হচ্ছে বাংলায়, চাষ হচ্ছে স্ট্রবেরির। মাছে এমন বিপ্লব ঘটে গেছে যে পাঙাশ মাছ এই দেশে এখন সবচেয়ে সস্তা। কত নতুন নতুন ব্যবসায়িক উদ্যোগ দেখি এখানে-ওখানে। আর মানুষ ভালো কাজ করছেন। অনেকেই। এবং কাউকে না জানিয়ে।
ডাচ্-বাংলা ব্যাংক লি. ফাউন্ডেশনের শিক্ষাবৃত্তি কার্যক্রম তো ১০০ কোটি টাকার। এর চেয়ে ভালো বিনিয়োগ আর কিছুই হতে পারে না। মানবসম্পদে বিনিয়োগ, শিক্ষায় বিনিয়োগ। ডাচ্-বাংলা ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে আমি অন্তরের অন্তস্তল থেকে অভিবাদন জানাই। প্রথম আলো ট্রাস্টের বৃত্তি পায় অদম্য মেধাবীরা, যাদের অভিভাবকদের আয় খুবই কম। কিন্তু ওই শিক্ষার্থীরা, দেখা যাচ্ছে, পরের পরীক্ষাগুলোতেও ভালো করছে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই। ভালো ভালো উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়ছে। এরা নিজেদের জীবনটাকেই শুধু বদলাবে না, চারদিকের মানুষের জীবনও বদলে দেবে। আমি জানি একুশে পদকপ্রাপ্ত সমাজসেবক হাজি আবুল হাশেমের কথা। তিনি অনেকগুলো স্কুল-কলেজ প্রতিষ্ঠাই শুধু করেননি, খবরের কাগজে কোনো শিক্ষার্থীর দুর্দশার খবর ছাপা হলে গোপনে সেখানে ছুটে যান, তার জন্য একটা স্থায়ী কিছু করে দেওয়ার উদ্যোগ নেন, আর ওই শিক্ষার্থীকে বলেন, বড় হয়ে তুমি অন্তত একজন ছাত্রকে লেখাপড়া করতে সাহায্য কোরো।
আমাদের সহপাঠীদের বুয়েট ৮৯ ক্লাব বলে একটা সংগঠন আছে। তারাও প্রায় সবার অগোচরে একটা কাজ করছে। কল্যাণপুর পোড়া বস্তিতে তারা একটা ছোট্ট ডে-কেয়ার সেন্টার চালাচ্ছে। ওই বস্তির মায়েরা অনেকেই গার্মেন্টসে বা বাসাবাড়িতে কাজ করেন। তাঁদের বাচ্চারা দিনের বেলা থাকবে কোথায়? একদিন বিকেলে ওই ডে-কেয়ার সেন্টারে গিয়ে দেখি, একটা ঘরে ১০টা বাচ্চা সবুজ রঙের জামা পরে আরামে ঘুমুচ্ছে। ওরা সকাল সাতটায় আসে, সন্ধ্যা সাতটার পরে ফেরে। ওদের খাওয়ানো, পরানো আর লেখাপড়ার কাজটা করে এই সেন্টারটি। চিত্রনায়িকা ববিতা এই কার্যক্রম উদ্বোধন করে দিয়েছিলেন। এ তো গেল ভালো খবর। খারাপ খবরটা পেলাম ওই বস্তিতে গিয়ে, প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে বেরিয়েছে বস্তির যে ছেলেমেয়েরা, তাদের অনেকেই ভালোমতো পড়তে পারে না, লিখতে পারে না। মা গার্মেন্টসে চাকরি করেন, হয়তো তিন হাজার টাকা পান মাসে। তাঁকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ুয়া বাচ্চাকে গৃহশিক্ষকের কাছে পড়ানোর জন্য খরচ করতে হয় মাসে হাজার-বারো শ টাকা।
আমাদের প্রাথমিক শিক্ষার মান নিয়ে একটা বড়সড় আন্দোলন কিন্তু শুরু করা দরকার। ঢাকা শহরের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোয় কী হচ্ছে, গ্রামেগঞ্জে কী হচ্ছে, শহরের সমাজনেতারা তার কোনো খবর রাখছেন কি?
আমরা সবাই জানি, বাংলাদেশের প্রধান সম্পদ তার মানুষ। প্রায় এক কোটি লোক এখন প্রবাসী, প্রতিদিন তিন হাজার মানুষ বিদেশে যাচ্ছে কাজের সন্ধানে, এই সংখ্যাটা বাড়বে, কারণ একজন বিদেশে গেলে তার আত্মীয়স্বজনকেও নিয়ে যাবে, কাজেই আগামী ১০ বছর পরে এই দেশের তিন কোটি লোকের প্রবাসী হওয়ার কথা। আর এখন ৮০ হাজার ছেলেমেয়ে মাধ্যমিকে জিপিএ-৫ পাচ্ছে। এই লাখ লাখ ছেলেমেয়ে লেখাপড়া শিখে যখন কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করবে, সেই দেশটার অগ্রগতি কে ঠেকিয়ে রাখতে পারবে?
আমাদের রাজনীতিতে আগামী দুই বছরে আপনি কোনো সুসংবাদ আশা করেন না, আমি জানি। কিন্তু ২০ বছর পরে এই দেশটা যে একটা আলোকিত উন্নত দেশ হবে, সেটা কিন্তু একটা গাণিতিক বাস্তবতা। কারণ, আজকের শিক্ষার্থীরা তখন কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করবে। শিক্ষার বিষয়ে আমাদের আরও মনোযোগী হতে হবে, বিনিয়োগ বাড়াতে হবে, আর মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে একটা আন্দোলন শুরু করতে হবে। তা হলে দেশটার উন্নতি কেউই ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না।
আনিসুল হক: সাহিত্যিক ও সাংবাদিক।

 আগের সেরা লেখাগুলো পড়তে নিচের পছন্দের শিরোনামে ক্লিক করুন... (পেইজটি লোড হওয়ার পর ৫ সেকেন্ড অপেক্ষা করে click here to continue লেখার উপর ক্লিক করলেই আপনার পছন্দের লেখা পেয়ে যাবেন........)